বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০

১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকের এক দুপুর। জৈষ্ঠের খরতাপে যখন চারদিক শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে এমনি এক দুপুরে একদল মানুষরূপী হায়েনারা একটি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আনন্দোৎসবে মেতে উঠেছিল। হায়েনাগুলোর অতর্কিত আক্রমন এবং আগুনোৎসবে সেদিন ভস্ম হয়ে গিয়েছিল একটি পরিবারের সবকিছু। সমস্ত অন্ন-বস্ত্রসহ পুরো বাসস্থান, পরিবারটির চলার মত সামান্য আয়ের উৎস একটি দোকানের সমস্ত মালামালসহ সবকিছু পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল রাজাকারগুলো। একটি গর্ভবতী ছাগল ছিল দাওয়ায় বাঁধা। ছাগলটিকে পর্যন্ত জীবন্ত পুড়ে মেরে ফেলেছিল হায়নাগুলো।

প্রাণ ও সম্ভ্রম বাঁচানোর তাগিদে সেদিন আমার মা-বাবা-কাকা-কাকী ও দাদী দৌড়ে পালিয়েছিল এক বস্ত্রে। দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কীভাবে ছাইয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাজাকারগুলো পারলে তাদেরও জীবন্ত পুড়ে ফেলত কীনা বলা যায় না।

না, আমার তখনো জন্ম হয়নি, আমার জন্ম হয়েছে আরো ছয় বছর পর। জন্ম হয়নি আমার বড় বোনেরও। কিন্তু একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দিতে যা কিছু করার সবই করেছিল তোদের পূর্বপুরুষ। তারপর আজ ৩৯ বছর পার হয়ে গিয়েছে। এই ৩৯ বছরের ৩৭ টা বছর ধরে আমার পরিবারের করতে হয়েছে অবিরত সংগ্রাম। সে সংগ্রামের কিছু কথা না বললেই নয়।

৭২ এ আমার পরিবার এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মাইগ্রেশন করে কেবল ২ খানা মাদুর এবং ২ খানা কাথা নিয়ে। মাইগ্রেশনের পূর্বে সামান্য জমিটুকু বিক্রি করে মহাজনের দায় শোধ করে যেতে হয়েছিল। সুন্দরবন আবাদের যে সামান্য জমিকে সম্বল করে তাঁরা মাইগ্রেশন করেছিলেন সে জমি তখন বাস এবং চাষ দুটোরই অযোগ্য ছিল। অন্যের বাড়িতে উদ্বাস্তু হয়ে বসবাস, অন্যের বাড়িতে কামলা খাটা, তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের জমিটুকুকে বাস ও চাষযোগ্য করে তুলেছিল আমার বাবা-কাকা।

ব্লগের রাজাকারের বাচ্চাগুলো কখনোই বুঝবি না যে একজন মানুষ কীভাবে অন্যের বাড়িতে কামলা খাটে, তোরা কখনোই বুঝবি না যে একজন গর্ভবতী মা কীভাবে সন্তান পেটে নিয়ে মাটি কেটে ঘরের পোঁতা বাধে, তোরা কখনোই বুঝবি না যে কীভাবে একজন মানুষ অর্ধপেটা খেয়ে জীবনধারণ করে।

আজ আমার এখানে পৌঁছানোর কথা নয়। এই ডিসেম্বরে আমার হাতে ল্যাপটপ থাকার কথা ছিল না। কোন রাজাকারের বাচ্চার বিরুদ্ধে আমার বিষোদগার করার কথাও ছিল না। আমার হাতে থাকার কথা ছিল কাস্তে কিংবা কোদাল। তোদের পূর্বপূরুষরা আমার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়ে তাই-ই চেয়েছিল। বাদ সেধেছে আমার মা-বাবা। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমই আমাকে আজ এ অবস্থানে তুলে এনেছে এবং তোদের পূর্বপূরুষের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করার দাবী তুলছি আমি। আমার যে ভবিষ্যতকে গলা টিপে হত্যা করে দিয়েছিল তোদের পূর্বপূরুষরা তা সফলতার মুখ দেখেনি। তাই আজ আমার কণ্ঠে সোচ্চার দাবী ওঠে তোদের পূর্বপূরুষদের কৃতকর্মের জবাবদিহীতার। না, রাজাকারের বাচ্চাগুলোর কাছে আমার কোন প্রশ্ন নেই। ওরা তো তাদেরই সন্তান। তবে প্রশ্ন রয়েছে ব্লগীয় সুশীল ভেকধারীদের কাছে, ধর্ম নিয়ে কিছু বললেই যাদের সুশীলতা চাগার দিয়ে ওঠে।

পারলে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে যান-

কী কারণে সেদিন আমার পরিবার তথা এই অনাগত আমি'র ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল? সে কি কেবলই মুক্তিযুদ্ধ? কই, আমাদের তখনকার সেই গ্রামে তো অনেক মুসলমান ছিল, তাদের তো কারো ঘর পোড়েনি? তাহলে আমাদের ঘর পুড়ল কেন? সে গ্রামে তো এখনো বেশ কয়েকজন রাজাকার, যারা আমাদের ঘর পুড়েছিল, তারা বেশ বহাল তবিয়তে আছে। কী করে আছে? কেন আছে?

জানি আপনাদের কাছে কোন উত্তর পাব না। পাওয়ার আশাও রাখি না।

*পোস্টটি ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে লিখেছিলাম। সেদিন ইন্টারনেটের বাইরে থাকায় দেয়া হয়নি। আজ দিবনা দিবনা করেও দিয়ে ফেললাম। কে জানে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত.................সে তো অনেক সময়!

শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১০

ধর্মের নামে মেধাশূন্য জাতি নির্মান এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অপমৃত্যু--বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড

[img|http://www.executedtoday.com/images/Bangladesh_Martyred_Intellectuals.jpg]


বুদ্ধিজীবি হত্যা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। [link|http://www.rongmohol.com/topic7360.html|এই লিংকে] গিয়ে বুদ্ধিজীবিদের সংখ্যা ও নামের তালিকা দেখতে পারেন। শুধু একটা প্রশ্নই মনে জাগে কতটা পাশবিকতা মানুষকে এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে প্রণোদিত করতে পারে?! পাশবিকতা শব্দটাও বোধ হয় একদমই যথার্থ নয় কারণ পশু কখনও এরকম আচরণ করে না।

[img|http://www.pictureworldbd.com/images/Liberation_War/war71 (14).jpg]

২৫শে মার্চ কালো রাত থেকেই পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কুত্তাগুলো এদেশের শিক্ষক-ছাত্রদের হত্যা শুরু করে। ঐরাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়। এরপর পাক সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের এদেশীয় দোসর কুত্তাগুলো সমস্ত মুক্তিযুদ্ধকালীন সারা দেশ জুড়েই এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে যখন পাকিদের পরাজয় কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন তারা এদেশী কুত্তাগুলোর সাথে বসে আমাদের বুদ্ধিজীবিদের তালিকা করতে শুরু করে। যে শুয়োরগুলো এই কাজে সহায়তা করেছে তারা তখন মুক্তিযুদ্ধের সেই শেষ দিকে এসেও কীভাবে পাকি কুত্তাগুলোকে এই খুনের জন্য সহযোগীতা করেছে তা আমার মনে কেবলই প্রশ্ন জাগায়। তারা জানত যে বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই তাদের এদেশে বাস করতে হবে। তবুও মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশী এই শুয়োরগুলো পাকী কুত্তাবাহিনীদের সহায়তা করে যাচ্ছিল। পাক সেনাবাহিনীকে এদেশী বুদ্ধিজীবিদের নামের তালিকা প্রণয়ন করতে সাহায্য করা এবং ১৪ ডিসেম্বর পাক সেনাবাহিনীর সাথে মিলে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করার মত কোন্ যুক্তি থাকতে পারে এই শুয়োরগুলোর মধ্যে??

[img|http://www.mukto-mona.com/Articles/ajoy/gen11.jpg]

যুক্তি অবশ্যই ছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে যেহেতু তারা আর রাখতেই পারছেনা তাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করা আর তাদের দোসরদের উদ্দেশ্য ছিল [sb]যে চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সেই চেতনার ধারকদের বিনাশ করা[/sb]। পরবর্তীতে যখন এই কুত্তাগুলো আবার সংগঠিত হল এবং রাজনীতিতে প্রবেশ করল তখনও তারা মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে বিনাশে উদ্যোগী হল এবং এখনো সক্রিয় আছে।

[img|http://www.thedailystar.net/magazine/2007/11/03/cover05.jpg]

বুদ্ধিজীবিদের তালিকা দেখলে আমরা দেখতে পাই পাকবাহিনী এবং রাজাকার-আলবদররা সবচেয়ে বেশী হত্যা করেছে শিক্ষকদের। মোট ৯৯০ জন শিক্ষককে তারা হত্যা করেছে। শিক্ষকদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ছিল। উপমহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রগতিশীল শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের মুক্তবুদ্ধি চর্চা তথা প্রগতিশীল সাহিত্যিক, শিল্পী, কবিদের অনেকেরই বিদ্যাপিঠ ছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাদে আরো যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে দেখা যায় বেছে বেছে প্রগতিশীল সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ডাক্তার, পেশাজীবিদের নাম।

[img|https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiOvnlIACC5OtIM1TDeKIwN54wPc35lmksBvz8p9uyHa1Fgbx5b6VCdleF2TrTbP9cwR1JfZUFHt55dVDHTXne-wsgfChZdDJufRcZiGhjjxFRHVbhZm7hYEuzWSy5sAG6avODIgGvt6VRj/s320/BD-Intellectual+Martyred.jpg]

১৯৭১ এ যারা স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল তাদের মধ্যে ভারী দলটা যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সবধরণের সহায়তা করেছিল তাদের প্রধান পরিচয় তারা এদেশের ইসলামের ধারক-বাহক ও প্রচারক। চিরকালই প্রগতিশীলতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে ইসলাম অন্যতম প্রধান শত্রু বলে মনে করে এসেছে। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশী বাঙালীদের মধ্যে যে প্রগতিশীল চেতনার জন্ম দেয় তারই ফসল ১৯৭১। ভাষা আন্দোলনই বাংলাদেশী বাঙালীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা। যে চেতনাকে ইসলাম তাদের ধর্মের শত্রু বলে বিবেচনা করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি অন্যতম উপাদান ছিল ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে বুদ্ধিজীবি হত্যার মাধ্যমে রাজাকার-আলবদর-আলশামস সহ সকল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিদোসরগুলো চেয়েছিল এদেশ থেকে প্রগতিশীলতা তথা মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিনাশ ঘটানো।

[img|http://genocidebangladesh.org/wp-content/uploads/2008/02/bangla1.jpg]

ধর্মগুলো সবসময়েই মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে গলাটিপে মেরে ফেলতে চাইলেও এ চর্চা থেমে থাকেনি। আমাদের মুক্তবুদ্ধি চর্চার ইতিহাস অনেক পূরাণো। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মুক্তবুদ্ধির দর্শণ চার্বাক দর্শণ। বাঙালীদের প্রথম এ জাতীয় দর্শণের সাথে পরিচয় ঘটে গৌতম বুদ্ধের দর্শণের মাধ্যমে। তাছাড়া বাঙালীর লৌকিক ঐতিহ্যের দিকে দৃষ্টি ফিরালে দেখতে পাওয়া যায় পাশ্চাত্য তথা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু সংখ্যক বাঙালীর মধ্যেই যে মুক্তবুদ্ধির চর্চা সীমিত থেকেছে এমন ধারণা মোটেই সত্য নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে প্রাক-আধুনিককাল থেকেই বাংলার সাধারণ জনগন মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিবাদিতার চর্চা করে এসেছে নানা প্রতিকূলতার চাপের মধ্যেও। কখনো কখনো সে স্রোত-ধারা ক্ষীণ বা অবদমিত হয়েছে, কখনো বা উর্ধগামীও হয়েছে; কিন্তু কখনোই সে স্রোত একেবারে রুদ্ধ বা স্তব্ধ হয়ে যায়নি।

[img|http://img2.photographersdirect.com/img/26650/wm/pd2281629.jpg]

আমাদের দেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চার আরেক নিদর্শণ এদেশের বাউল সমাজ। লালন ফকিরের একটি জনপ্রিয় গান তুলে দিলাম।
[sb]সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।
জগত বেড়ে জাতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জাতের ফাতা
ঘুচিয়াছে সাধ বাজারে।। [/sb]

জালাল উদ্দীন খাঁর লেখায় দেখতে পাই-
[sb]ধর্ম হতে এই জগতে দলাদলিই কেবল সার
ভুলে পড়ে জালাল ঘোরে মন হইল না পরিষ্কার।
এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডময় একের মন্দ অন্যে কয়
করে কত হিংসার উদয় ঘৃণার চক্ষে চায় আবার,
কাগজের এই বস্তা ফেলে মহাসত্যের দেশে গেলে
ভেসে যাবে সব সলিলে ধর্ম বলতে নাই কিছু আর।[/sb]

কিংবা- [sb]মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এ মন্ত্রণা কে দিয়াছে মানুষ ভজ[/sb]

কবি দ্বিজ দাসের লেখায় ফুটে ওঠে স্পষ্ট অবিশ্বাস-
[sb]কেউ বলে আছ তুমি কেউ বলে নাই
আমি বলি থাকলে থাকুক না থাকিলে নাই।
যারে নয়নেও দেখি নাই শ্রবণেও শুনিনাই
আছ কি না আছ মেলে না প্রমাণ।
পাগল দ্বিজদাসের গান।[/sb]

এদেশে এখন বাউল ভাস্কর্য ভাঙা হয়। কেন ভাঙা হয় তার উত্তর খুঁজতে দার্শণিক হতে হয় না। বাউলদের মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে ইসলাম তথা ধর্ম ভয় পায়। যেন বাউলদের ভাস্কর্য ভাঙলেই ওঁরা বোবা হয়ে যাবে। ওঁদের সাহিত্য, ওঁদের গান মানুষের মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। হুমায়ুন আজাদকে মেরে ফেলতে পারলেই যেন তাঁর সকল সাহিত্যকর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একাত্তরে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে যেমন ওরা বাঙালী জাতিকে মেধাহীন করেছিল, তেমনি এখনো এই শুয়োরগুলোকে এতটুকু সুযোগ দিলে শুয়োরগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিবে বাঙালি জাতির সকল প্রগতিশীলদের।

[img|http://www.pictureworldbd.com/images/Liberation_War/war71 (17).jpg]

[sb]বস্তুত হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলাম ইত্যাদি প্রথাগত ধর্ম আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসকদের ধর্মকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু ঐ সব ধর্মগুলোই বাঙালী লোকসমাজে প্রবেশ করে ক্রমেই তাদের শাস্ত্রীয় বিশুদ্ধতা হারিয়ে লৌকিক ধর্মে পরিণত হয়েছে। বাঙালীর লৌকিক ধর্মগুলো প্রথাগত শাস্ত্রধর্মের রক্ষণশীল তত্ত্ব ও বিধানকে বরাবরই প্রত্যখান করেছে এবং সে প্রত্যাখানে লোকসাধারণের কাণ্ডজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধিই নির্ধারক ভূমিকা গ্রহণ করেছে। [/sb]

[img|http://www.mukto-mona.com/Special_Event_/16December/image/martryd_int.jpg]

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল তার বিরাট একটা অংশ ছিল ছাত্র। তখনকার সময়ের প্রায় সকল প্রগতিশীল চিন্তার ছাত্ররাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাদের অনেকেই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে। স্বল্পশিক্ষিত একটা জাতিগোষ্ঠির জন্য একসাথে এতগুলো ছাত্রের মৃত্যুই ছিল জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার সাথে বেছে বেছে শীর্ষ বুদ্ধিজীবিদের হত্যা জাতি হিসেবে আমাদের কতখানি পিছিয়ে দিয়েছে তার নিদর্শন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

[img|http://muktadhara.net/picture_library/bj.jpg]

আজ আমাদের দেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের বড়ই সংকট। শুধু সংকট নয়, তাদের জীবনই ঝুকিপূর্ণ। একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী যখন খুনের হুমকি পায় তখন থানায় যেতে ভয় পায়। কারণ এখন রাষ্ট্রীয়ভাবেই এ দেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে ঠেকানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে সরকারগুলো। শুধু ক্ষমতার লোভে বি.এন.পির মত রাজনৈতিক দল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিরোধিতা করে, জামাতের মত যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে জোট বাঁধে। আওয়ামী লীগের মত রাজনৈতিক দল মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সমতুল্য ঘোষণা দেয়। বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ নামক এক জগাখিচুরী সংবিধানের খসড়া অনুমোদন করে। ভোটের আগে আওয়ামী রাজনীতিবিদের সাথে রাজাকারের কোলাকুলির ছবি দেখতে পাই পত্রিকায়। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই সাহেবকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধাপরাধী বিচারের নাম পাল্টে হয়ে যায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এটা এখন আর বুঝতে বাকি নেই যে, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের দাবীকে উপেক্ষা করতে পারেনি বলেই আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধী বিচারের কাজ হাত নিয়েছে, মোটেই স্বেচ্ছায় নয়।

[img|http://img3.photographersdirect.com/img/26650/wm/pd2176262.jpg]

বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা না হলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে থাকতাম এরকম আমি নিশ্চিত করে বলছি না। তবে আমাদের দেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চার এই বেহাল অবস্থা হতো না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। প্রগতিশীলতার এমন অপমৃত্যু হতো না। আমরা হতাম না এমন নৈতিকতাহীন জাতি। যে বুদ্ধিজীবিদের সেদিন হত্যা করা হয়েছিল তারা একদিকে যেমন এ দেশকে আরো অনেক কিছু দিতেন, তেমনি এই পাকি শুয়োরদের সহায়তাকারী এদেশী কুত্তাগুলোর আস্ফালনও এতখানি বৃদ্ধি পেত না। এদেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদের জীবন এমন বিপন্ন হতো না। বিপন্ন হতো না এ জাতির ভাগ্যাকাশ।

=====================================
লেখকের কথাঃ
অনেকেই এই পোস্টটিকে ইসলামকে হেয় করার দোষে দুষ্ট করছেন দেখে খারাপ লাগছে। আমার পোস্টের বিষয়বস্তু হল "[sb]বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ড আমাদের মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে বিপদসংকুল করেছে যা আমাদের নৈতিকতাহীন জাতিতে পরিণত করেছে[/sb]" দ্বিতীয়তঃ "[sb]আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই[/sb]", তৃতীয়তঃ "[sb]ধর্ম প্রগতিশীলতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চাকে যতই রুখতে চাক বাঙালী নিজের মত করে ধর্মকে সাজিয়ে নিয়ে মুক্তবুদ্ধি চর্চা করেছে[/sb]"

যেহেতু যারা যুদ্ধাপরাধী তারা সবাই তাদের অপকর্মকে ইসলামের নামে চালিয়েছে তাই ইসলাম এবং ধর্ম শব্দটা এসেছে। আমার পোস্টে ধর্মের সমালোচনা বলতে এটুকুই বলা হয়েছে যে "[sb]ধর্ম প্রগতিশীলতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিরোধী[/sb]"

পোস্টে আলোচনা হলে এই চারটি বিষয় নিয়েই হওয়া উচিত বলে মনে করি। সবাইকে ধন্যবাদ।

বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০১০

প্রিয় মা ও মাতৃভাষা, আমার অশ্লীল শব্দাবলীর জন্য আমাকে ক্ষমা করো

প্রিয় মা আমার,
তোমার নিশ্চয়ই সেই দিনটিকে মনে আছে মা, যেদিন আমি বিপ্লবকে খুব করে মেরেছিলাম। গ্রামের লোকজন সালিশ বসিয়েই আমার বিচার করতে চেয়েছিল। তাদের এবং বিপ্লবের অভিযোগ ছিল যে আমি তাকে অহেতুক পিটিয়েছি। তাদের দাবি কেবল ‘শালার পো শালা’ গালির জন্য আমি কাউকেই ওরকম মারতে পারি না। কিন্তু মা, তুমি তো জান আমি শিশুবেলা থেকেই গালিকে কী ভীষণ ঘৃণা করতাম! আমার শিশুবেলা থেকেই কেন জানি মনে হত- যে ভাষার জন্য আমার দেশের ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়েছে সে ভাষাকে ব্যবহার করে গালি দিলে ওঁরা কষ্ট পায়। কেউ যখন বাংলা ভাষায় গালি দেয় আমার দুচোখে ভেসে ওঠে ওঁদের হারিয়ে যাওয়া লাশগুলোর ব্যথিত মুখ। আমি দেখতে পাই তোমার কোলে নিদ্রারত ওঁরা ব্যথায় কুকড়ে ওঠে।

মা, আজ আমি বিপ্লবের কাছে, গ্রামবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। আজ আমি গালিকে ঘৃণা করি না। বরং গালি দিতে আনন্দই বোধ করি। মা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বিপ্লব, তুই কোথায় আছিস জানিনা। যেখানেই থাকিস, আমাকে ক্ষমা করে দিস।

প্রিয় মাতৃভাষা,
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাকে ব্যবহার করে আমি আজ চূড়ান্ত অশ্লীল গল্প লিখি। মানুষরূপী জানোয়ারগুলোকে যাচ্ছেতাই গালি দিই। তোমার অপব্যবহারে আমি আর কেপে উঠি না। বরং মনে হয় তোমার শব্দভাণ্ডারে এইসব কুরুচিপূর্ণ-অশ্লীল শব্দ না থাকলে আমার মনের ভাব আমি সঠিক প্রকাশ করতে পারতাম না। আমার চারপাশে তথা আমাদের দেশের দিকে তাকিয়ে আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসে। তখন আমার মুখ দিয়ে - আমার হাত-কিবোর্ড দিয়ে গালি না বোরেলে আমি হাঁসফাঁস করি। সাধুদের মালা জপার মত আমি সারাক্ষণ বিড়বিড় করি ’শুয়োরের বাচ্চা’ ’শুয়োরের বাচ্চা’ বলে। প্রিয় মাতৃভাষা আমার, বিপ্লবের সাথে হয়তো কোনদিন দেখা হবে না, সে আমাকে কোনদিন ক্ষমাও করবে না; কিন্তু তুমি আমার প্রতিদিনের সাথি, তোমার শব্দাবলীর দিকে চোখ রেখে রেখে আমি প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ি, তুমি চাইলেই আমাকে ক্ষমা করে দিতে পার। আমি জানি তুমি তা করবে।

প্রিয় মা,
১৯৫২-৬৯-৭১ হয়ে ১৯৯০। তুমি তোমার বুকে বহু রক্ত ঝরতে দেখেছো। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, এরপর স্বৈরতন্ত্র পতনের আন্দোলন। তোমার দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়ে তাদের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু আজ আমরা এ কোন কৃষ্ণগহ্বরে পতিত? আমরা ভেবেছিলাম এবার আমরা তোমার বুকে আর রক্তের হোলিখেলা দেখব না। আমরা ভেবেছিলাম আর আমরা পাকিস্তানী আর্মি কিংবা স্বৈরতন্ত্রের পুলিশ বাহিনীর মত গুলি দেখব না। কিন্তু না মা। আমরা এখন দেখছি শুধু পুলিশ নয়, আমরা নিজেরাই একে অপরকে পিটিয়ে হত্যা করছি, আমরা একে অপরকে গুলি করে হত্যা করছি, আমরা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর বলে একে অপরকে ছুড়ি দিয়ে রগ কেটে হত্যা করছি। আমরা এতটাই বর্বরে পরিণত হচ্ছি যে মৃতের থ্যাতলানো নাক-চোখ দেখে আমরা মৃত্যোৎসাহে মেতে উঠছি। এইসব বর্বরগুলোকে আমি শুয়োর বলে গালি না দিলে আমি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাব। মা, তুমি আমার এই অসভ্যতাকে মার্জনা কর।

আমরা আজ বিভাজিত। কিছু ক্ষমতালোভী শুয়োরের কাছে জিম্মি আমরা পুরো জাতি। ওরা আমাদের ওদের ইচ্ছেমত ভাগ করে নিয়েছে। বাঙালীর জীবনে আর কোন ৫২-৬৯-৭১ জন্ম নিবে না। প্রিয় মা, তোমার প্রয়োজন হলেও আমরা আরেকটা ৬৯ কিংবা ৭১ ঘটাতে পারব না। কারণ এই ক্ষমতালোভী শুয়োরগুলো আমাদের ঐক্য, আমাদের শিক্ষা, আমাদের নৈতিকতা, আমাদের সমাজ, আমাদের সংস্কৃতি সবকিছুকে বিভাজিত করে দিয়েছে। তোমার ছাত্ররা, যারা তোমার সকল প্রয়োজনেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা আজ জাতির কাছে বিভীষিকা, মূর্তিমান আতংক। তোমার যুবসমাজ টেন্ডারবাজ, হতাশাগ্রস্ত, নেশাখোর, উদভ্রান্ত এবং খুনী। তোমার শিশুরা ভুল শিক্ষায় আক্রান্ত হয়ে শিশুবেলায়ই হয়ে যাচ্ছে এক একজন মানসিক রোগী। বল মা, এসব দেখেও কি আমি এইসব ক্ষমতালোভী ভণ্ড শুয়োরগুলোকে শুয়োর বলব না?

প্রিয় মা এবং মাতৃভাষা, আমার অশ্লীল শব্দাবলীর জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।

শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১০

গল্প: ধর্ষণালায়ে দুই রাণীমাতা (১৮)+

এই গল্পের ঘটনা চরিত্রের সাথে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় বলে বিবেচিত হবে।

এইতো বিশ বছর আগেও এই ধর্ষণালয়ের কর্তা ছিলেন একজন রাজা। অবশ্য তিনি পুরুষ কীনা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার পত্নী-উপপত্নীরা তাকে অপূরুষ বলেই দাবি করেন। বর্তমানে এই প্রাক্তন রাজা এই ধর্ষণালায়ের রাজা হওয়ার চিন্তাভাবনা বাদ দিয়েছেন। এখন তিনি রাণীমাতাদের স্তন পান করেই সন্তুষ্ট থাকেন।

ধর্ষণালয়ে রাণীমাতারা পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার সার্টিফিকেট লাভ করেন। সাধারণত নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তেই প্রাক্তন ধর্ষ-রাজার ডিমান্ড বেড়ে যায়। লম্পট ধর্ষ-রাজা তখন দুই রাণীর স্তন চুষে চুষে স্তনের মিষ্টিত্ব পরীক্ষা করেন। তারপর যে রাণীর স্তন বেশি মিষ্টি বলে মনে হয় তার স্তনবৃন্তে ঝুলে পড়েন।

অবশ্য নির্বাচনে সুন্নতি দাড়ি সমৃদ্ধ আর একটি বেশ্যার দালালও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই দালালটি সবসময়েই মেক-আপ সমৃদ্ধ ফোলানো চুলের ফর্সা রাণীর স্তনেই ঠোট গুজে রাখে। এর প্রধান কারণ তার নূরাণী চেহারার সাথে কালো রাণীর চেহারা ঠিক খাপ খায় না।

এই ধর্ষণালায়ে মোট ৩০০টি সাধারণ কক্ষ ও ৪৫টি রিজার্ভড কক্ষ রয়েছে। ৫ বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম ৩০০টি কক্ষের জন্য একজন করে ধর্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি কক্ষের জন্য নির্দিষ্ট ধর্ষকগণ তাদের ক্ষমতার ৫ বছরে ঐ কক্ষের যাবতীয় বস্তু - চেয়ার টেবিল মানুষ গাছ পাখি বই পুস্তক (কোরান বাদে, রাণীমারা কোরাণ শরীফ ছাড়া ক্ষমতায় যেতে পারেননা বেলে এটাকে ধর্ষনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে) ঘড়ি আলমারী হাড়ি পাতিল আলো বাতাস পানি মাটি দেয়াল ছাদ চাল ডাল আলু ভাত সবকিছুকে ধর্ষণের অধিকার পায়। ধর্ষকগুলোর হাসের লিঙ্গের মত প্যাচানো শিশ্নগুলো ড্রিল মেশিনের মত ঢুকে যায় যাবতীয় পদার্থ কিংবা শক্তিকে ভেদ করে। যেসব নির্ধারিত ধর্ষকদের নিজস্ব শিশ্ন নেই তারা অপরেরটা ধার করেই চালিয়ে যায় অথবা রাণীমাতা তাদের জন্য ডিলডো সরবরাহ করে। ইয়াবা ভক্ষণকারী এই ধর্ষকগুলোর কোনকালেই অর্গাজম আসেনা, তাই ক্ষমতার ৫ বছর তাদের অবিরাম ধর্ষণ চলতে থাকে।

অবশ্য এই ধর্ষকগুলো কেবল নিজেরাই ধর্ষণ করে না, ধর্ষনে সাহায্য করার জন্য কিছু উপধর্ষক ও পাতিধর্ষক পোষে তারা। ধর্ষকগুলো যখন তাদের উপপত্নীদের দিয়ে শিশ্ন চোষানোয় ব্যস্ত থাকে তখন নির্ধারিত কক্ষগুলোর ধর্ষাণাধিকার এই উপ ও পাতি ধর্ষকেরা। মূল ধর্ষকগুলো যখন ধর্ষণ করে তখন তারা কেবল তাদের শিশ্নকেই ব্যবহার করে, কিন্তু উপ-পাতি ধর্ষকেরা প্রত্যেকটা পদার্থ কিংবা শক্তিকে তাদের দাত-নখ-জিহ্বা দিয়ে কেটে-ছিড়ে-চেটে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। যে ধর্ষক ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ধর্ষণ করতে পারে রাণীমাতা তাদের কাছে ডেকে নিয়ে আদর করেন। প্যারিস হিলটনের মত মুখে শিশ্ন নিয়ে চুষে চুষে বীর্যপাত ঘটান।

ধর্ষণালয়ের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে রাণীমাতা ৩০০ কক্ষের যেকোনটিতে নিজে ধর্ষণ করার ক্ষমতা রাখেন। রাণীমাতার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যগণ নির্ধারণ করে দেন রাণীমাতা কখন কোন কক্ষে তার ধর্ষণ কাজ চালাবেন। রাণীমাতাদের ডিলডো বেধে দেয়ার কাজও করে থাকে এই উপদেষ্টামণ্ডলী।

এই ধর্ষণালয়ের রাণী দুজনের অন্যসব বিষয়ে হাজারো অমিল থাকলেও ধর্ষণ বিষয়ে অলিখিত ধর্ষবিধানকে তারা কোরাণের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়। ধর্ষনালয় পরিচালনার বিধান সম্বলিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। কিন্তু সে বইটিকে তারা থোরাই তোয়াক্কা করে এবং সুযোগ পেলেই বইটিকে তারা সবাই মিলে গণধর্ষণ করে।

বর্তমানে দুই রাণীমাতার মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্ক। মেক-আপসমৃদ্ধ ফর্সা রাণীমাতা অনেকদিন যাবত ধর্ষণালয়ের পরিচালনা কমিটির মিটিংয়ে সাঙ্গপাঙ্গসহ অনুপস্থিত আছেন। তার অভিযোগ তাদের বসতে যে চেয়ার দেয়া হয়েছে তাতে তাদের বিশেষ করে রাণীমাতার পাছার সংকুলান হয় না। কেউ কেউ অবশ্য অভিযোগ করেছেন যে চেয়ারে বসার পরে তাদের পাছার নিচে শক্তমত কিছু ঠেকেন যা ক্রমাগত লম্বা হতে হতে তাদের পাছায় ঢুকে পরতে চায়।

খুব শীঘ্রই আমরা সুন্দরী রাণীমাতার কাছ থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচন চেয়ে আন্দোলনের নির্দেশনা পাব। রাস্তায় আর্জেস গ্রেনেড, অস্ত্রসহ মাইকে শহীদ অথবা গাজী হবার ঘোষণা দেখতে পাব। ক্ষমতায় থাকা রাণীমাতার দল অবশ্য ইতোমধ্যেই তাদের লগি-বৈঠার দৌড়াত্ম দেখাতে শুরু করেছেন। লগি-বৈঠার পূর্ণ ব্যবহারে রাজপথে আরো বেশি রক্ত দেখার পৈশাচিক আনন্দ লাভ করব আমরা।
আবার দেখব রাণীমাতাদের ঝুলে যাওয়া স্তনবৃন্তগুলো এটুলির মত চুষছে ধর্ষণালয়ের প্রাক্তন রাজা এবং ছাগলা দাড়িসমৃদ্ধ নূরাণী চেহারার লোকগুলো।

আমি প্রতিদিন ঘুমাবার আগে একবার করে হস্তমৈথুন করব যাতে ঘুমাতে গিয়ে রাণীমাতা ও তার ধর্ষকদের ধর্ষণের ঘটনাগুলোকে ভুলে নিশ্চিন্তে ঘুম পাড়া যায়।

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অপ্রিয় সত্য কথন: প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম

কদিন আগে এই ব্লগের আসিফ মহিউদ্দীন নিকটি ব্যানের খপ্পরে পড়েছিল, এ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অবগত আছেন। নিছক ব্লগ রাজনীতির মারপ্যা পড়ে যে তিনি ব্যান হয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত আট মাস আগের যে পোস্টটিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে সেটার জন্যই প্রমাণ হয় যে আসিফ মহিউদ্দীন কেবলই ব্লগ রাজনীতির খপ্পরে পড়েই ব্যান হয়েছিলেন।

এখন দেখা যাক, আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যানে কারা খুশি হয়েছিলেন? যিনি বা যাদের রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে তিনি ব্যান হয়েছিলেন তাদের কাউকে ব্লগে ফুর্তি বা নাচানাচি করতে দেখিনি। তারা পারবেনও না। কারণ তাদের প্রধান নিকগুলোয় সুশীলতার ছাপ মারা। ব্লগের অনেক ভাল ভাল লেখার লেখক তারা। তাদের সেসব লেখাগুলো পড়লে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে যাই, তাদের লেখনীর গভীরতায় এবং অনুসন্ধিৎসু মনের চিন্তাশীলতায় অবাক হয়ে যাই। সুতরাং আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যানে খুশি হয়েছে বোবা-কালা ইত্যাদি নিকধারী কিছু জাশি আর হিজবুতি ছাগুর দল। কিছু তালগাছবাদী দার্শনিকও অবশ্য খুশী হয়েছেন। কারণ আসিফ মহিউদ্দীনের যুক্তির কাছে যে তাদের পিছলানো ছাড়া উপায় থাকে না।

এবার সেই(সব) সুশীলদের কাছে প্রশ্ন-আপনারা কি এইসব ছাগু আর তালগাছবাদীদের খুশি করার জন্যই আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যান করার মত নাটক ঘটিয়েছিলেন? উত্তর নিশ্চয়ই 'না'।

আসিফ মহিউদ্দীন ব্লগে নাস্তিকতা প্রচার করেন। এবং সবসময়ই যুক্তি এবং উদাহরণের মাধ্যমেই তার নাস্তিকতার স্বপক্ষতা কিংবা ধর্মের বিপক্ষতা তুলে ধরেন। নাস্তিকতা প্রচারে অনেক সময়ই কেবল তা ইসলাম বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়। আসিফ মহিউদ্দীন [linkhttp://www.somewhereinblog.net/blog/realAsifM/29216777তার এই পোস্টে] এবং আমি [linkhttp://www.somewhereinblog.net/blog/Sannyasi/29216158আমার এই পোস্টে] এর ব্যাখ্যাও দিয়েছি। আজ আমি কিছু অপ্রিয় কথা দিয়ে এর স্বপক্ষে কিছু বলব।

কিছু কিছু ব্লগার আস্তিকতা-নাস্তিকতা প্রসঙ্গকে ঘৃণা করেন। তাদের মধ্যে কিছু নাস্তিক ব্লগারও রয়েছেন, তবে এ দলের বেশিরভাগ ব্লগারই আস্তিক যারা ধর্মের সহজ-পালনীয় বিষয়গুলোই পালন করে থাকেন এবং ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই পালন করেন না। এইসব সুশীল ব্লগাররা কিন্তু ব্লগের জাশি-হিজবুতি ছাগুদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। অনেক নাস্তিক ব্লগারদের চেয়েও তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে। এইসব সুশীল ভাইদের কাছে আমি এই বার্তা পৌছে দিতে চাই যে- ব্লগ থেকে ছাগু তাড়িয়ে আপনারা যে রোগের প্রতিকার করছেন, আমরা সে রোগ প্রতিরোধে কর্তব্যরত। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ যে উত্তম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ম নামক ঢালকে ব্যবহার করেই এইসব ছাগুরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শরীরে ক্যান্সার আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং প্রতিকারের সাথে সাথেই প্রতিরোধ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। মুক্তচিন্তার বিকাশ ও প্রসারই পারে এইসব ছাগু নামক ক্যান্সার হতে আমাদের দেশকে বাঁচাতে। আপনাদের মত সুশীলতা দিয়ে হবে না। চাই যুক্তির ধারালো অস্ত্র, হোক সে পারমানবিক।

যারা ব্লগে নিছক সাহিত্য-চর্চা করেন-তারা বলবেন কি আপনাদের বর্তমান সাহিত্য সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে? আপনারা যে কবিতা লেখেন তা এতই অবোধগম্য এবং অসামঞ্জস্য উপমায় ভরা যে দেশের ১০০ জন উচ্চশিক্ষিত লোককে পড়তে দিলে ৯৯ জন তার ভাবার্থ ধরতে পারবে না, অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকদের কথাতো বাদই দিলাম। আপনাদের গল্প/মুক্ত পদ্যের ক্ষেত্রেও তাই। আপনার ভুলে যান যে আপনাদের সাহিত্যই সব নয়। একটা দেশে শুধু সাহিত্যে আধুনিক যুগ এলেই চলে না, শিক্ষা-অর্থনীতি-বানিজ্য এসবগুলোতেও আধুনিক যুগ না এলে আপনাদের আধুনিক সাহিত্য চর্চা কেবল বাদামওয়ালার বাদাম বিক্রিতেই প্রয়োজন হয়। বিদেশী কিছু বই পড়ে আপনারা তাদের অনুকরণ করে দেশের সাহিত্যে আধুনিক/উত্তরাধুনিক যুগ নিয়ে আসেন যেখানে দেশের অন্যান্য প্রায় সব সেক্টরই রয়ে গিয়েছে মধ্যযুগীয় আদলে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর কথা ভাবেন-সেখানে আপনাদের মত সাহিত্যে আধুনিকতা উড়িয়ে আনা হয়নি। সব সেক্টরের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে সময়ের আবর্তেই আধুনিকতা এসেছে, জোর করে নিয়ে আসা হয়নি।

অনেকেই হয়তো ভাবছেন 'কীসের মধ্যে কী, পান্তা ভাতে ঘি'। তা নয় ভাই। আমরা নাস্তিকরা সমাজের পরিবর্তন চাই। আমরা চাই শিক্ষা, আমরা চাই চিন্তা, আমরা চাই মুক্তি। আমরা চাই না একটা শিশু শিশুবেলায়ই হোক চিন্তাশক্তিহীন, অবিজ্ঞানমনস্ক এবং সর্বোপরি ভাগ্যনির্ভর। সুতরাং আমাদের নাস্তিকতা প্রচার চলবে। অবশ্যই আপনাদের মত যারা শিক্ষিত, পূর্ণবয়স্ক, যারা আগামীর সন্তানদের জনক এবং শিক্ষক তাদের মাঝেই আমাদের প্রচারণা চলবে। কারণ আপনারাই আমার আপনার সন্তানদের ভবিষ্যত শিক্ষক। আপনার হাজারটা কবিতা-গল্প দিয়ে আপনারা সারাজীবনে একটা লোককে তার নীতিহীনতা থেকে সরাতে পারবেন না। কিন্তু আমি আমার জীবনে অন্তত দশটা লোককে বই পড়িয়ে এবং যুক্তি দিয়ে নাস্তিকতাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছি। (নাস্তিকতাবাদ বলতে যদি কেউ ভেবে থাকেন কেবল ঈশ্বরের অনস্তিত্ত্ববাদ তাহলে সে ভুল করবেন। নাস্তিকতাবাদের ভিত্তি র‌্যাশনালিজম)। এই দশটা লোক দেশের জন্য কতটুকু করতে পারবেন জানিনা তবে এটুকু নিশ্চিত যে এরা কোনদিন শিবিরের কর্মী হবে না, হিজবুতী ইউটোপিয়ায় আক্রান্ত হবেন না। ধর্ম নামক যে প্যারাসাইট দেহে ছাগু নামক ক্যান্সারের জন্ম দেয় তা আমি এদের শরীর থেকে বিনাশ করে দিয়েছি। আবারো লিখছি-"[sb]প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম[/sb]।"

বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

রূপকথার দেশে কবি ও কৃষক

রূপকথার এক দেশে একবার দুর্ভিক্ষ হলো
আধপেটা খাওয়া কৃষকগণ না খেয়ে মরলো, তবুও
জমিদারগণ খাজনা আদায় থেকে বিরত হলেন না
রাজকোষেও যথারীতি খাজনা জমা হলো এবং
রাজকবিগণও যথারীতি কবিতা লিখলেন
তাদের কবিতা শুনে রাজা শান্তিতে ঘুমাতে গেলেন

কবিরা স্বভাবতই আবেগী, তাই
কেউ কেউ কৃষকগণের দূরাবস্থা নিয়েও কবিতা লিখলেন, যদিও
সেসব কবিতা রাজাকে শুনানো হলো না
(এই দুর্ভিক্ষে নির্বিঘ্নে পেট পুরে ভাত খাওয়ার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় ?)

রূপকথার সেই দেশে কিছু গেয়ো কবি ছিল
রাজার দরবারে সম্মান না পেলেও কৃষকগণ তাদের খুব ভালবাসত
কৃষকদের প্রতি তাঁদেরও ছিল অনেক মমত্ববোধ
বিনোদনহীন কৃষকদের আনন্দ দেয়ার মধ্যেই ছিল তাঁদের সুখ

কালের বিবর্তনে রাজকবিগণের উত্তরসুরিরা আধুনিক হলেন
তাঁদের আধুনিকতার দাপটে গেয়ো কবিগণ হারিয়ে গেলেন
কৃষকগণ কবিতা থেকে বঞ্চিত হলো, এবং
কবিতা তার আভিজাত্য ফিরে পেলো
(গেয়ো কৃষকরা কবিতার কী বোঝে ?)

রূপকথার সেই দেশে একবার যুদ্ধ শুরু হলো
কবিগণ শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলে (মনে মনে) বিরক্ত হলেন
নির্বিঘ্নে কবিতা রচনা করার জন্য তাঁরা সীমান্ত পাড়ি দিলেন এবং
সীমান্তের ওপারে বসে তাঁরা দেশের জন্য কবিতা লিখলেন

কৃষকগণ কবিতা লিখতে জানে না, সুতরাং
যারা ওপারে গেল তারা কবিদের মত আদৃত হল না
রিফিউজি ক্যাম্পে কেউ মারা গেল, কেউ অর্ধমৃত হয়ে বেঁচে রইলো
বেশিরভাগ কৃষকই বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে নড়ল না
তারা লাঙল ছেড়ে জোয়াল কাধে শত্রু হননে নেমে গেল
যুদ্ধে যোগ দেয়ার অপরাধে অনেকেরই মা-বোন-বউ ধর্ষিত হল
বাবা-ভাই-সন্তান বেয়নেটের ধারাল খোচা আর গুলি খেয়ে মারা গেল
দেশে কৃষকদের এইসব বীরত্মগাথা শুনে কবিরা কবিতা লিখলেন

যুদ্ধ শেষে কবিরা সবাই দেশে ফিরলেন
বিজয়ের আনন্দে তারা হাজার হাজার কবিতা লিখলেন
কৃষকদের অনেকেই যুদ্ধ শেষেও ফিরল না
কবিরা তাদের নিয়েও কবিতা লিখলেন

রূপকথার সে দেশে কবিরা আজও কবিতা লেখেন
জোছনার ঠ্যাং, গোধুলির টিকোলো নাক কবিদের ভাষায় বিমূর্ত মূর্তি লাভ করে
কবিদের সেসব কবিতায় কৃষকের লাঙলের ফলার কথাও থাকে
কাস্তের মত প্রিয়ার বাঁকা গ্রীবা অথবা মন
ধান কাটা শেষে শস্যহীন মাঠের মত ফাঁকা হৃদয়
কবিদের উপমায় ধন্য হয় কৃষকের যাবতীয় উপকরণ, তবে
কৃষকগণ সেসব কবিতা যদিবা কোনদিন মরিচের ঠোঙায় পেয়েও থাকে
তা বোঝার সাধ্যি তাদের থাকে না, কেননা
কবিরা নিজেরাই যে সেসব .......(ডট.ডট.ডট)

--------------------
পরবর্তী দৃশ্য: প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সন্ন্যাসীর ভো দৌঁড় অতপর নাঙা সন্ন্যাসীতে রূপান্তর

মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০১০

মানবতাই হোক মানুষের একমাত্র ধর্ম

তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই জন্ম মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। জন্ম দেয়াই যেন জীবনের উদ্দেশ্য কিংবা কোন প্রকার পদ্ধতিহীন যৌনতা আমাদের পৃথিবীটাকে দিন দিন মানুষে মানুষে ভরে তুলছে। এসব দেখে দেখে শাওনের মন খারাপ হয়ে যায়। তারই এক ক্লাশমেটের (হুজুর) বড় ভাই- যে কীনা একজন বি.সি.এস অফিসার (ডাক্তার)- তার ষষ্ঠ সন্তান জন্ম নিয়েছে ক'দিন আগে। তার ঘৃণা লাগে এসব মানুষকে।

এই প্রযুক্তির যুগেও আমাদের দেশের লোকদের এক একজনের পাচটা, সাতটা, দশটা সন্তান হচ্ছে। এখনো হুজুরদের ফতোয়া শোনা যায় গ্রামে-গঞ্জে-এমনিক শহরেও। তারা মাহফিলে মাইক বাজিয়ে এসব ফতোয়া প্রচার করে। এক একজনের গলা টিপে উচ্চারিত শব্দগুলোকে থামিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় শাওনের। যতসব ভণ্ড সুবিধাবাদী ধর্মব্যবসায়ীর দল!

পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই এদের গলাবাজি, এদের ঠকবাজি বন্ধ করার। কারণ এদের খুটির জোর খুব শক্ত। আল্লাহ, ভগবান, গড নামক এক মিথ্যে বস্তুর ভয় দেখিয়ে তারা দুনিয়ার তাবত মানুষকে অথর্ব ও ভীতু করে রেখেছে। শাওনের ইচ্ছে হয়, এইসব মানুষকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে। তার গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়- "তোমরা যা জান, সব ভুল। তোমরা সত্যকে আড়াল করে তোমাদের শিখিয়ে দেয়া এক মিথ্যাকে আকড়ে আছ। তোমাদের জন্মের জন্য কোন আল্লহ বা ঈশ্বরের করুণা নেই, করুণা যদি থেকেই থাকে সে তোমার বাবা-মায়ের এবং এই মাটির, এই প্রকৃতির। তোমাদের সৎ ও অসৎ পথে পরিচালনা করার জন্য কোন ফেরেশতা বা শয়তান নেই, রয়েছে তোমার বিবেক কিংবা নৈতিকতাহীন মানসিকতা। তোমাদের পাপ-পূণ্য বোঝার দরকার নেই, তোমাদের দরকার ভাল-মন্দ শিক্ষা। তোমাদের স্বর্গ দরকার নেই, তোমাদের দরকার সুখ ও শান্তি। মৃত্যুর পরে তোমাদের শাস্তি দেবার জন্য কোন দোজখ নেই, সেখানে শাস্তি দেয়ার মতোও কেউ নেই। তোমরা তোমাদের বিবেক দ্বারা পরিচালিত হও এবং দেশের আইন-কানুন মেনে চলো, তাহলে পৃথিবীকেই তোমরা স্বর্গে পরিণত করতে পার। তোমরা তোমাদের সন্তানদের যেমন ভালবাস, পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকেই তেমন ভালবাসতে শেখো। দেখবে পৃথিবীতে কোন লাদেন কিংবা জাওয়াহিরি জন্মাবে না, বুশ কিংবা ব্লেয়ার জন্মাবে না। জন্মাবে রবীন্দ্রনাথ, কীটস্ কিংবা আইনস্টাইন। তোমরা যে পথে চলছো তাতে পৃথিবী অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে, অনাগতদের জন্য এক ভয়াবহ পৃথিবী তৈরী করে যাচ্ছ তোমরা। তোমরা কি একবারও ভেবেছো- তোমাদের সন্তানদের মৃত্যুর পথ উন্মুক্ত করে দিয়ে যাচ্ছ তোমরা। তাদেরকে বাচতে দাও। তুমি কান পাতলেই শুনতে পাবে ওদের চীৎকার। ওরা বাচতে চায়। তোমাদের পরস্পরের ভালবাসা এবং পৃথিবীর প্রতি তোমাদের ভালবাসাই ওদেরকে বাচাতে পারে। সুতরাং তোমরা ভালবাস-- নিজেকে, অপরকে এবং পৃথিবীকে।"

শাওন জানে তার এ কথা কেউ শুনবে না। এ কথা সে যেখানেই বলতে যাবে, সেখানেই সে অবাঞ্চিত হয়ে যাবে। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে মুরতাদ ঘোষণা করা হবে এবং তাকে কতল করার পরোয়ানা জারী করবে এইসব ধর্মব্যবসায়ীরা।

কিন্ত ভবগান বা আল্লাহর মৃত্যু না হলে পৃথিবীতে প্রকৃত ভালবাসা সৃষ্টির কোন পথ নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে, সে ভগবাণে বিশ্বাস করে না এবং যে ভগবাণে বিশ্বাস করে, সে আল্লাহকে বিশ্বাস করে না। শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকলেও চলত। একজন ভগবাণ-বিশ্বাসী মানুষ অন্য সমস্ত আল্লাহ-বিশ্বাসী মানুষকে ঘৃণা করে এবং আল্লাহ-বিশ্বাসী মানুষ সমস্ত ভগবাণ-বিশ্বাসী মানুষকে ঘৃণা করে। (ইসলাম অনুসারীদের বিধর্মী শব্দটার ব্যবহারটা ভেবে দেখুন)। এই যে মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক ঘৃণা এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে নব্য জেহাদী চেতনা- যা পৃথিবী জুড়ে এক ইসলামী জঙ্গীবাদের সূচনা করেছে- এসব পৃথিবীকে ধ্বংসের এক পায়তারা। কে শিখাবে এসব জেহাদীদের, এসব জঙ্গীদের যে- তোমরা যার জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে অপর অনেক জীবনকে মৃত্যুর কোলে পৌছে দিচ্ছ, সে শুধুই মিথ্যে, এক অলীক কল্পনা।

শাওনের বলতে ইচ্ছে হয়- এই দেখ, আমি একজন মানুষ, তোমাদের মত মিথ্যে ঈশ্বর বা আল্লাহতে আমি বিশ্বাস করি না কিন্তু সকলের প্রতি আমার রয়েছে অগাধ ভালবাসা।

তোমাদের ঈশ্বর কিংবা আল্লাহর উপস্থিতি কেবল বিশ্বাসে, বাস্তবে নয়। তোমরা ঈশ্বর, আল্লাহ এবং বেহেশতকে যেমন ভালবাস, তেমনি করে তোমরা মানুষকে ভালবাসতে পার না? মানুষ মেরে বেহেশতে যাওয়ার যে স্বপ্নে তোমরা বিভোর, সে বেহেশতের ঠিকানা কি তোমাদের জানা আছে? সে তোমাদের অন্তরে। তোমাদের অন্তরের ভালবাসাই তোমাকে সেখানে পৌছে দিতে পারে এবং সেজন্য তোমার মৃত্যুর দরকার নেই, কাউকে মারার তো প্রশ্নই আসে না।

এ পৃথিবীর সবাইকে শাওনের একটি কবিতার দু'টি লাইন শোনাতে ইচ্ছে করে, যে কবিতাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এক সহপাঠি লিখেছিল--
"তুমি সন্ত্রাসী মার, তুমি ডাকাত মার
কিন্তু ভেবে দেখো
তুমি একজন মানুষ মারছো।