শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অপ্রিয় সত্য কথন: প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম

কদিন আগে এই ব্লগের আসিফ মহিউদ্দীন নিকটি ব্যানের খপ্পরে পড়েছিল, এ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অবগত আছেন। নিছক ব্লগ রাজনীতির মারপ্যা পড়ে যে তিনি ব্যান হয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত আট মাস আগের যে পোস্টটিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে সেটার জন্যই প্রমাণ হয় যে আসিফ মহিউদ্দীন কেবলই ব্লগ রাজনীতির খপ্পরে পড়েই ব্যান হয়েছিলেন।

এখন দেখা যাক, আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যানে কারা খুশি হয়েছিলেন? যিনি বা যাদের রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে তিনি ব্যান হয়েছিলেন তাদের কাউকে ব্লগে ফুর্তি বা নাচানাচি করতে দেখিনি। তারা পারবেনও না। কারণ তাদের প্রধান নিকগুলোয় সুশীলতার ছাপ মারা। ব্লগের অনেক ভাল ভাল লেখার লেখক তারা। তাদের সেসব লেখাগুলো পড়লে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে যাই, তাদের লেখনীর গভীরতায় এবং অনুসন্ধিৎসু মনের চিন্তাশীলতায় অবাক হয়ে যাই। সুতরাং আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যানে খুশি হয়েছে বোবা-কালা ইত্যাদি নিকধারী কিছু জাশি আর হিজবুতি ছাগুর দল। কিছু তালগাছবাদী দার্শনিকও অবশ্য খুশী হয়েছেন। কারণ আসিফ মহিউদ্দীনের যুক্তির কাছে যে তাদের পিছলানো ছাড়া উপায় থাকে না।

এবার সেই(সব) সুশীলদের কাছে প্রশ্ন-আপনারা কি এইসব ছাগু আর তালগাছবাদীদের খুশি করার জন্যই আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যান করার মত নাটক ঘটিয়েছিলেন? উত্তর নিশ্চয়ই 'না'।

আসিফ মহিউদ্দীন ব্লগে নাস্তিকতা প্রচার করেন। এবং সবসময়ই যুক্তি এবং উদাহরণের মাধ্যমেই তার নাস্তিকতার স্বপক্ষতা কিংবা ধর্মের বিপক্ষতা তুলে ধরেন। নাস্তিকতা প্রচারে অনেক সময়ই কেবল তা ইসলাম বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়। আসিফ মহিউদ্দীন [linkhttp://www.somewhereinblog.net/blog/realAsifM/29216777তার এই পোস্টে] এবং আমি [linkhttp://www.somewhereinblog.net/blog/Sannyasi/29216158আমার এই পোস্টে] এর ব্যাখ্যাও দিয়েছি। আজ আমি কিছু অপ্রিয় কথা দিয়ে এর স্বপক্ষে কিছু বলব।

কিছু কিছু ব্লগার আস্তিকতা-নাস্তিকতা প্রসঙ্গকে ঘৃণা করেন। তাদের মধ্যে কিছু নাস্তিক ব্লগারও রয়েছেন, তবে এ দলের বেশিরভাগ ব্লগারই আস্তিক যারা ধর্মের সহজ-পালনীয় বিষয়গুলোই পালন করে থাকেন এবং ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই পালন করেন না। এইসব সুশীল ব্লগাররা কিন্তু ব্লগের জাশি-হিজবুতি ছাগুদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। অনেক নাস্তিক ব্লগারদের চেয়েও তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে। এইসব সুশীল ভাইদের কাছে আমি এই বার্তা পৌছে দিতে চাই যে- ব্লগ থেকে ছাগু তাড়িয়ে আপনারা যে রোগের প্রতিকার করছেন, আমরা সে রোগ প্রতিরোধে কর্তব্যরত। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ যে উত্তম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ম নামক ঢালকে ব্যবহার করেই এইসব ছাগুরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শরীরে ক্যান্সার আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং প্রতিকারের সাথে সাথেই প্রতিরোধ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। মুক্তচিন্তার বিকাশ ও প্রসারই পারে এইসব ছাগু নামক ক্যান্সার হতে আমাদের দেশকে বাঁচাতে। আপনাদের মত সুশীলতা দিয়ে হবে না। চাই যুক্তির ধারালো অস্ত্র, হোক সে পারমানবিক।

যারা ব্লগে নিছক সাহিত্য-চর্চা করেন-তারা বলবেন কি আপনাদের বর্তমান সাহিত্য সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে? আপনারা যে কবিতা লেখেন তা এতই অবোধগম্য এবং অসামঞ্জস্য উপমায় ভরা যে দেশের ১০০ জন উচ্চশিক্ষিত লোককে পড়তে দিলে ৯৯ জন তার ভাবার্থ ধরতে পারবে না, অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকদের কথাতো বাদই দিলাম। আপনাদের গল্প/মুক্ত পদ্যের ক্ষেত্রেও তাই। আপনার ভুলে যান যে আপনাদের সাহিত্যই সব নয়। একটা দেশে শুধু সাহিত্যে আধুনিক যুগ এলেই চলে না, শিক্ষা-অর্থনীতি-বানিজ্য এসবগুলোতেও আধুনিক যুগ না এলে আপনাদের আধুনিক সাহিত্য চর্চা কেবল বাদামওয়ালার বাদাম বিক্রিতেই প্রয়োজন হয়। বিদেশী কিছু বই পড়ে আপনারা তাদের অনুকরণ করে দেশের সাহিত্যে আধুনিক/উত্তরাধুনিক যুগ নিয়ে আসেন যেখানে দেশের অন্যান্য প্রায় সব সেক্টরই রয়ে গিয়েছে মধ্যযুগীয় আদলে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর কথা ভাবেন-সেখানে আপনাদের মত সাহিত্যে আধুনিকতা উড়িয়ে আনা হয়নি। সব সেক্টরের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে সময়ের আবর্তেই আধুনিকতা এসেছে, জোর করে নিয়ে আসা হয়নি।

অনেকেই হয়তো ভাবছেন 'কীসের মধ্যে কী, পান্তা ভাতে ঘি'। তা নয় ভাই। আমরা নাস্তিকরা সমাজের পরিবর্তন চাই। আমরা চাই শিক্ষা, আমরা চাই চিন্তা, আমরা চাই মুক্তি। আমরা চাই না একটা শিশু শিশুবেলায়ই হোক চিন্তাশক্তিহীন, অবিজ্ঞানমনস্ক এবং সর্বোপরি ভাগ্যনির্ভর। সুতরাং আমাদের নাস্তিকতা প্রচার চলবে। অবশ্যই আপনাদের মত যারা শিক্ষিত, পূর্ণবয়স্ক, যারা আগামীর সন্তানদের জনক এবং শিক্ষক তাদের মাঝেই আমাদের প্রচারণা চলবে। কারণ আপনারাই আমার আপনার সন্তানদের ভবিষ্যত শিক্ষক। আপনার হাজারটা কবিতা-গল্প দিয়ে আপনারা সারাজীবনে একটা লোককে তার নীতিহীনতা থেকে সরাতে পারবেন না। কিন্তু আমি আমার জীবনে অন্তত দশটা লোককে বই পড়িয়ে এবং যুক্তি দিয়ে নাস্তিকতাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছি। (নাস্তিকতাবাদ বলতে যদি কেউ ভেবে থাকেন কেবল ঈশ্বরের অনস্তিত্ত্ববাদ তাহলে সে ভুল করবেন। নাস্তিকতাবাদের ভিত্তি র‌্যাশনালিজম)। এই দশটা লোক দেশের জন্য কতটুকু করতে পারবেন জানিনা তবে এটুকু নিশ্চিত যে এরা কোনদিন শিবিরের কর্মী হবে না, হিজবুতী ইউটোপিয়ায় আক্রান্ত হবেন না। ধর্ম নামক যে প্যারাসাইট দেহে ছাগু নামক ক্যান্সারের জন্ম দেয় তা আমি এদের শরীর থেকে বিনাশ করে দিয়েছি। আবারো লিখছি-"[sb]প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম[/sb]।"